উত্থিত ভূমির দেশে
গোলাপ ছড়ানো পথে একদিন হেঁটেছি অশেষ
নির্নিমেষ পাহাড়ের নিচে বয়ে গেছে ছোট এক নদী
তারপাশে ঘনবন, ঝরাবীথি, হলুদ গাছের ছায়া
শান্ত অশ্বদের বিচরণ দেখেছি সেখানে
পাথর বিছানো জলে, কে না চায় নামতে একবার
সে পাথর ফলেছে যেখানে, হিম হিম জলের কিনারে-
নতমুখে আমিও তা ছুঁয়েছি নিরবে।
বন, গিরি, পাখি ও ফুলের পিছে
দৃষ্টি আর যায় না যেখানে
বিজন সেই খাদে, এই নদী করেছে জীবনের সূচনা
দেখেছি সঙ্গোপনে, তারই পাশে ভিক্ষুরা নিজেদের স্বর্গ করেছে রচনা।
(দুই)
ভূ—উত্থানের পর কোনও এক প্রাচীন পথিক এসে জেনেছিল, এখানে বাস নেই
মানুষের
আছে শুধু বধির স্তব্ধতা- এখানে পাখিরা গায় অনাবিল সুখের মহিমা
পাহাড়ের শ্যামল সংকেত ছেয়ে রাত্তি গভীরে মাঝে মাঝে জেগে উঠে বজ্র—ড্রাগনের
হাঁক
যে পথিক এসেছিল আগে, তার কোনও বিবরণ পাঠ্য নেই মানুষের পৃথিবীতে
তবু যে কোনও ভ্রমিক এসে দেখতে পায়, দেখে দেখে শুনতে পায় আদিম
চিত্র—বিবরণী
কবি তার শব্দ পায়, ভাষ্য পায় সন্ত ও শিল্পীরা
কেবলি প্রেমের পিছে বিত্ত ঢেলে যারা ছিল নিঃস্ব— নমন
তাদেরি মতন কিছু ক্ষ্যাপা এসে একদিন মুগ্ধপ্রাণে বসেছিল এই গিরিদেশে
পাহাড়ের পুত্র ওরা, সন্ধ্যা শেষে ঘুমায় পাহাড়ে
হিম হিম শান্তি আসে, বোধে আসে মধুমন্ত্রমালা
কেঁপে কেঁপে মৃত্যু আসে, স্বপ্ন আসেÑ পুরাতন নিসর্গ নিয়মে ।
(তিন)
তৃণসারে আম্র—মুকুলের মতো এসব ফলে থাকে হিমে জবুথবু পাহাড়ের খাঁজে
বিজন সন্ধ্যায় কেউ এসে স্তব্ধ হবে না দেখে এইসব মেঠোফুল—শোভা
গোপন সন্ন্যাসে একদল নগ্ন—ভিক্ষু ফিরে কিছুদিন পরপর, ওদের পায়ে দলে বেজে
উঠে পাতার মর্মর
তারও পরে নিথর হেমন্তপ্রাতে একদিন পাতাকুড়ানিরা আসে, জ্বালের ইন্দন ভেবে
ঝেঁটে নেয় ওরা সব দিনশেষে ফুলে ফুলে মাটির উনুনজুড়ে সুর ও সুবাসের
অগ্নিউৎসব শুরু হয় আর
পত্র—গুল্মের সাথে নিশিভর পুড়ে চলে অঙ্কুরের ইতিহাস।
তবু রাতের কর্ম শেষে উগ্রসুখে ঘুমায় মানুষ, নিজের বেদনা থেকে স্বপ্ন আঁকে ওরা
আবার দিনশেষে, ব্যর্থপ্রাণে বেদনা বিলায়;
জানে ওরা, এসব বেদনা থেকে মুক্তি আছে পুবেÑ
পশ্চিমে সুধাস্বর, আছে দিশা দশদিকে:
রোজ হৃদয়ের রোগ বেঁধে মুষড়ে পড়ে গেলে-
অন্তরের চক্ষু সে খুলবে কখন!