গান ও মেশিন গানের কবিতা

ঐ দ্যাখো, সীমান্ত-কাঁটাতারের বেড়া।
অথণ্ড পৃথিবী খণ্ড করে বাক্সপেটরা মাথায় নিয়ে বাপ,
ছেলেমেয়ের হাতধরে দাঁড়িয়ে আছে মা,
খুঁজছে স্বদেশ কোথায়!
লাগাতার বােমার বিস্ফোরণ ঘটে গেল
কারখানার ছাউনিতে।
ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়লাে দুধ ফ্যাক্টরির শেডের উপর।
বাড়ি বাজার মহল্লায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অগ্নিবারুদ।
লড়াই! কে কতাে মানুষ খাবে!
এখন স্কুলের চিলেকোঠার ছাদের উপর
চক্কর দিচ্ছে বােমারু বিমান।
আলাে ও শব্দের অপূর্ব সমন্বয়-
ক্লাসের দেয়ালে ঝুলছে বিশ্বমানচিত্র।
দুনিয়ার দেশগুলাে চেনাচ্ছিলেন ভূগােল-দিদিমণি।
মুহূর্তে স্কুল ইউনিফর্ম ও মেঝে রক্ত মাংসে মাখামাখি।
স্তন্ধ ঝলসানাে ক্লাসমেট,ব্ল্যাকবাের্ড ও দিদিমণি—
চক-ডাস্টার,বইব্যাগ ছিটকে পড়ে আছে করিডরে।
তুমিই বলাে,
আজ কি গান শােনাবাে তােমায়?
অন্তর মম বিকশিত করাে
আগুনের পরশমণি জ্বালাও প্রাণে
অথবা বিশ্বজোড়া প্রাণ!
ঐ দ্যাখো, দাঁড়িয়ে দূরে–
কাঁটাতার-মেশিন গান!

আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই

আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই।
আমার প্রতিদিনই নারীদিবস
আহা! নারীদের ফোন।


আয়েশা সুলতানা ফোন করে বাংলাদেশ থেকে
শামিন ইসলাম, সায়েদা খাতুন,
দিনে অন্তত পাঁচবার ফোন করে।
তারা বলে, সব নদীগুলি দেইখ্যা যাইতে পারেন নাই বইল্যা আপনের খুব দুঃখ!
আমরা নদী হইয়া তাই রােজ আপনারে ফোন করি’,
বলেই তারা হেসে ওঠে।


এর চেয়ে ভালাে নারীদিবস আর কি হতে পারে!
আমি বলি হতেই পারাে নদী
নদীকে আমি স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ বলি না,
বলি নারী ধ্বনি, বলি নারীস্বর।


আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই।
দেবলীনা ফোন করতাে আমায়
প্রতিদিন রাতের গভীরে—
এখন উপায় নেই
অসহায় হয়ে পড়েছে কি না জানিনা।
তাই এখন আর ফোন করেনা।


মনসৃজা এখনও আমায় ফোন করে।
আজই সকালে ফোন করে বলেছিল,
আমায় বােলপুর নিযে যাবে?
সােনাঝুরি বন, খােয়াই দেখাবে?
জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে….’


ঋতমা আমায় রােজই ফোন করে।
এই মেয়েটির আবার অন্য ধরনের ফোন-
শাহিনবাগে কি হচ্ছে বলাে
পার্ক সার্কাসে আমাকে নিয়ে চলাে
স্বাধীনতা পার্কে আন্দোলন কতদূর এগােলাে
তুমি কোনাে মিছিলে যাচ্ছাে নাকি!
আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই।
সুচেতনা মেয়েটি আবার বৃক্ষপ্রেমী।
সে অরণ্যে যেতে চায়
সে বলে, সরলবর্গীয়, পর্ণমােচী, মর্মর,
বৃক্ষবাকল, বােধিবৃক্ষ শব্দগুলি
তােমার কেমন লাগে?


তটিনী নামের মেয়েটি ফোনে
জানিয়েছিল, চলাে হােলির দিন বেরিয়ে পড়ি।
তুমি আমাকে জ্যোৎস্না দেখাবে বলেছিলে!
লঞ্চের ডেকে বসে সুঁদুরি,হেতালের বন,
মাতলা নদীর স্রােত দেখতে দেখতে
ঢুকে যাবাে খাঁড়িতে!
ফুলমণি মান্ডি নামের মেযেটির সঙ্গে
আমার কথা হয়।
আজ নারীদিবসে সে জানায়
এবার নাকি পলাশ, কৃষ্ণচূড়ায়
ওদের ওখানে আগুন লেগেছে।
এবার হােলির জ্যোৎস্নায় তারা নাচবে
ধামসা মাদল বাজবে।
আরও বলেছে, এবার এলে
আমাকে মহুয়া খাওয়াবে।
শ্রীরূপাও আমাকে নারীদিবসে
প্রভাতী শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছে,
দাদা! ভালাে থাকুন।
আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই।
আমার বাড়ির কাজের মেয়ে
আমার মেয়ের মতাে
সে হরিজন পাড়ায় থাকে
রােজই তার সঙ্গে দেখা, কথা হয়।
তার নাম পিয়ালি বাঁশফোঁড়।
সে কোনােদিন ফোন করেনা।
সে আজ ফোন করে বলেছে,
কাকু! নারীদিবস কাকে বলে?
আমি তাে কিছুই জানি না!
আমি তাকে জানিয়ে দিয়েছি
আজ তাের ছুটি, কাজে আসতে হবে না।
কাল নারী দিবস সম্বন্ধে তােকে বুঝিয়ে দেবাে।
আমার বাড়ির আসল কাজের মেয়েটির সঙ্গে
আমার ফোনে কোনাে কথা হয় না।
সে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ
আমার পাশে থাকে, কথা বলে
সংবাদপত্র চা সহ আমার পাশে রেখে যায়।
সে আজ ভােরে হােয়াটসঅ্যাপে
একটা ছবি পাঠিয়ে বলেছে
কবিতার কোনাে নারীদিবস নেই।
আমার ফোনের কোনাে ধর্ম নেই।
আমার ফোনে প্রতিদিন নারীদিবসের কথা হয়।

Scroll to Top