কুয়াশামাখা সমুদ্র
আব্বা বলতেন, আদার বেপারী হয়ে
জাহাজের খবর নিতে যাওয়া
আর পানিতে টাকা ফেলা সে একই কথা!
জেনেছিলাম, জাহাজ চলে সমুদ্রে——
পাগলায় যেমন চলতো ভাদুচাচার গুজরঘাটের লা;
তখন আমি গাজী গাজী বলে নৌকা চালানো
মতলব মিয়ার মেঘনাও দেখিনি
অথচ আই এ সিক্স্থ স্ট্যান্ড করায়
একবার জাহাজে চড়ে সমুদ্র দেখার
আমন্ত্রণ জুটেছিল;
সেও আবার মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে!
এ যেন লাফ দিয়ে এভারেস্টে ওঠার স্বপ্ন!
কিন্তু গ্রামীণ পোস্টাফিসের সিস্টেম লস সহ
যখন হাতে পৌঁছে সেই দাওয়াতপত্র,
তখন সেই জাহাজ গভীর সমুদ্রের হাওয়া খেয়ে
ফিরে এসেছে পতেঙ্গা বন্দরে;
তার চিমনী উদগীরণ করছে তৃপ্তির ঢেঁকুর
আর তিন কুড়ি মেধাবী স্বপ্ন আকাশের
সাদামেঘ চুমে ছড়িয়ে পড়ছে——
জলজ বাতাসে দোলা সামুদ্রিক শেওলায়——
মৃত্তিকার পেটে
এবং ভবিষ্যতের সুবেহ—সাদিক মাখা দিগন্তে !
আমি কি অভিশাপ দিয়েছিলাম? মনে নেই।
কিন্তু সেই পোস্টাফিস আজ মরা তিস্তাা;
বৃষ্টির ভর্তুকি আর মৌসুমের বরাদ্দও
তাকে শ্রাবণের ইছামতী করে তুলতে পারে না
কেবল চতুর আড়ালে হাঙর হয়ে উঠতে চায়
কতিপয় ছদ্মবেশী বোয়াল।
আমার কি আর সমুদ্র দেখা হয়নি এজীবনে?
সেকথায় পরে আসি;
পদ্মাপাড়ের ছেলে এই আমার যখন
নদীতে ঝাপ দেয়ার সাহস ফুরিয়ে এসেছে,
আলতাদিঘিতেও নামতে চায় না পা,
তখন আবার সমুদ্র ভ্রমণের আমন্ত্রণ!
পোস্টাফিস নয়,
তাই এবার আর মিস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি;
কুয়াশার আব—ই রাওয়ান ঢেকে আছে
প্রশান্ত সমুদ্রের নিতম্ব
কিন্তু সকালের সোনালি আলোয়
উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে
অনুদ্বোধিত সৌন্দর্যের আয়নামহল;
দেখা যায়—— চোখ যায় যতদূর
দুপাশের ঝাউবন নাচবে বলে অপেক্ষায় আছে
লক্ষ্যভেদী ঝড়বাতাসের;
উদ্বোধিত হবে বলে প্রস্তুতিমাখা সিগন্যাল দিচ্ছে
একটি বন্দর;
মগ্নচূড়া থেকে ভেসে আসা
পরমানন্দের সুর
মুখরিত করে তুলতে চায় মহীসোপানের পাড়।
এই সমুদ্রে কোনো জাহাজ এখন অবধি
জল ভেঙেছে কি?
শান্তজলের চাতাল বুঝতে দেয় না সেও;
এবং কোনো চিহ্নও নেই সিডর আইলা মহাসেনের;
আমি এমভি ঈসা খাঁন নিয়ে ঢুকে পড়বো কি না,
সেই ভাবনায় মনোযোগ দিতে ——
সমুদ্রের নাভি থেকে ভেসে আসে
হামাব্যাক তিমির মহামিলনের গান !