“ ডেথ বেড অব শাহাজাহান” : ”মাদার অব গণেশা” “ কংকন , “ কচ ও দেবযানী “ ইত্যাদি চিত্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১- ১৯৪১) তাঁর শিল্পকলার যাত্রা শুরু করেন মোটামুটি ৬৫ বছর বয়সে । তাঁর করা স্কেচ ও পেউন্টিং ছিল তাঁর নিজস্ব শৈলীতে যা ভাষাতীত । নৈসর্গিক ছিত্র ছাড়াও “ লাস্ট ব্রেথ অফ আবু হুসেন”, “ বুদ্ধিষ্ট মেডিক্যান্ট” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য চিত্র ।
শিল্পী অসীত হালদার ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কে নাতি । যাঁর সময়কাল ছিল ১৮৯০ থেকে ১৯৬৪ অবধি । ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে তাঁর চিত্রগুলির মধ্যে সীতা , শিবা, পার্বতী, গুহক ও রাম , মাতা যশোদা , রামলীলা ইত্যাদি প্রসিদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য ।
নন্দনাল বসু ( ১৮৭৩-১৯৬৬) ছিলেন আরও একজন গুণী চিত্রশিল্পী। নটীর পূজা, উমার তপস্যা, জতুগৃহ, বোলপুরের পথে, সতীর দেহত্যাগ, কর্ণের পূজা ইত্যাদি বিখ্যাত চিত্রশিল্প ভারতীয় চিত্র চিত্রকলার অপরূপ নিদর্শনগুলির মধ্যে উল্লেখ্য ।
দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী ( ১৮৯৯- ১৯৭৬) ছিলেন অবনীঠাকুরের ছাত্র । তাঁর আকা “ দি মাদা “ , “ ইনটসিকেশন অফ টিউন”, “ ইভিনিং ইন দ্য সিটি”, “ দি গার্ড” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তিনি ভাস্কর হিসাবেও ছিলেন সুদক্ষ ।
এর পর আসেন যামিনী রায় । তিনি উল্লেখযোগ্য তাঁর এক্সপ্রেশান ও ডেপথ এর জন্য । বিখ্যাত কিছু ছবি হল “ ব্রাইডগ্রুম ইন ওয়েডিং “, ” নামাজ, “ “ মাদার”, “ সান্থাল গার্ল,” “ বস্ত্রহরণ”, “ লীলামাধুরী ইত্যাদি ।
মুকুল দে সেই সময়কালীন বিশিষ্ঠ চিত্রশিল্পী যাঁর বিখ্যাত ছবি “ ইভিনিং ল্যাম্প’, হোলি ডিপ অফ শকুন্তলা অন দি ইভ অফ লুনার একলিপ্স’, ” হোলি ডিপ অফ শকুন্তলা অন দি ইভ্ অফ লুনার একলিপ্স ‘, “ দোল ইত্যাদি । তিনি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে গভ: স্কুল অফ্ আর্ট এর পিনসিপ্ল নিযুক্ত হন ।
মুকুল দে-র সমসাময়িক অতুল বোস যাঁর উল্লেযোগ্য তৈলচিত্র গুলি হল- “ মেলাডি অ্যামিডস্ট ডেসট্রাকশন, সেইন্ট কভারড উইথ অ্যাসেস”, হিমালায়ান টিটিবিউস ইত্যাদি । তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন নিসর্গ চিত্র অঙ্কনেও । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে যান । শিল্পের প্রতি ডেডিকেশন ও এফোর্ট তাঁকে সেই সময়কালে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায় ।
চিত্রশিল্পী হেমেন মজুমদার ও ওই একই সময়কালীন । তাঁর নামকরা চিত্রকর্ম যেমন “ লেডি উইথ ওয়েট ক্লোথ্স” , “ ওম্যান টেইয় এ পিচার’ ছবিগুলি আজও শিল্পী তথা সাধারণ মানুষের প্রচণ্ড ভালো লাগার বিষয় । তাঁর আঁকা ভেজা শাড়ী পরিহিতা নারী বিষয়ক শিল্পকর্মগুলি তৈলচিত্রের ইতিহাসে( ভারতীয়) ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও চর্চিত সারা দুনিয়ায় । তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায় যে সেই নারী হিসাবে তাঁর পত্নী স্বয়ং ।
গ্রাফিক আর্ট – মোজাইক – ট্যাপেস্ট্রি – মিনিত্রচার পেইন্টিং – ম্যুরাল ইত্যাদি নিয়েও সেই সমং অনেক শিল্পী দূর্দান্ত সব কাজ করে গেছেন তার ভিতর থেকে সময়কার নগর, গ্রাম্য জীবন সমন্ধে অনেক তথ্য মেলে । সম্পূর্ণ দেশীয় কালচারের ছাপ পাওয়া যায় সেই সময়কার উড এনগ্রাভিং, এচিং, লিথোগ্রাফ, মোসাইক মিউরাল ইত্যাদি থেকে । পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান আর্ট এ “ বুদ্ধিজম’ এর ছাপ লক্ষ করা যায় ।
মুম্বাইতে প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপ গঠন হয় ১৯৪৭ সালে । মকবুল ফিদা হোসেন , এফ এন সুজা , এম .এইচ. এ গডে , রাজা , কে এইচ আরা এবং এস কে বাকরে প্রমুখ চিত্রশিল্পীরা মিলিতভাবে এই গ্রুপটি গঠন করেন । মর্ডাল্ণ আর এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ভারতবর্ষে । তাঁদেরই সমসাময়িক নামকরা চিত্রশিল্পীরা হলেন রামকুমার, আকবর পদমসি, জাহাঙ্গীর সাবাভালা প্রমুখরিা । সারা বিশ্বজুড়ে যাদের ছবি প্রসিদ্ধ । তারও আগে খুব অল্প বয়সেই খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন এবং অকালে প্রয়াত হন অমৃতা শেরগিল , ১৯৪১ সাল পর্যন্ত যার কাজ দেখতে পাওয়া যায় । তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত একজন মহিলা চিত্রশিল্পী । প্রথম জীবনে বিদেশে শিল্পচর্চা করলেও পরবর্তীকালে দেশীয় বিষয় নিয়ে দেশেই শিল্প চর্চায় ব্রতী হন ।
বহু খ্যাতনামা ভাস্করসহ আমাদের দেশের আজও বহু অসামান্য চিত্রশিল্পীতে সমৃদ্ধ । তাঁরা হলেন এ রামাচন্দ্র, অর্পিতা সিং, বদ্রী নারায়ন, বিকাশ ভট্টাচার্য , অঞ্জলি এলা মেনন, গণেশ হালই, যোগেন চৌধুরী, কে. জি সুব্রমন্য়ন, কৃষেন খান্না, লালু প্রসাদ সাউ, লক্সমা গোড, পরমজিৎ সিং, পরিতোষ সেন , মনজিৎ বাওয়া, মনু পারেখ, রামানন্দ বন্দোপাধ্যায় , রামেশ্বর ক্রষ্টা, শ্যামল দত্ত রায়, সোমনাথ হোড়, শক্তিবর্মন, সুধীর পট্টবর্ধন, থোটা বৈকুণ্ঠম, সতীশ গুজরাল প্রমুখরা । তাছাড়াও বহু উল্লেখযোগ্য শিল্পী আছেন যাদের চিত্রকলা আজ গোটা বিশ্বে সমাদৃত । তাছাড়াও বহু উল্লেখযোগ্য শিল্পী আছেন যাদের চিত্রকলা আজ গোটা বিশ্বে সমাদৃত ।
তবে এঁদের পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীরাও প্রস্তুত হচ্ছেন বিশ্বকে নতুন কিছু উপহার দেওয়ার জন্য ।
ইন্ডিয়ান ও ওয়েস্টার্ন আর্ট এর মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । যেমন ইন্ডিয়ান স্টাইল এ ৬ টি ফর্ম নিহিত থাকে – ১. রুপ ভেদ ২. প্রমাণ ৩.ভাব ৪. লাবণ্য ৫. সাদৃশ্য ও ৬) বনিকা । ভারতীয় চিত্রকরদের ছবিতে ৬ টি বিশেষ গুণ নিহিত থাকত । এই গুণ গুলি নিহিত থাকার ফলে ইন্ডিয়ান স্টাইল চিত্রে রীতি গোটা বিশ্বে একটি ইউনিক চিত্ররীতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । ভারতীং চিত্রশিল্পীরা তাঁদের চিত্রে নিজস্ব দীর্ঘসময়কালীন পরীক্ষা নিরিক্ষার দ্বারা একটা বিউটিফিকেশন আনতে সফল হয়েছিলেন ।
একটা ইনার মিনিং তৈরি হত তাদের ছবিতে । দেবদেবী , পাখি, লতা, গুল্ম ইত্যাদিতে ।
সেখানে ওয়েস্টার্ন আর্ট দাড়িয়ে ছিল তাদের পারসপেকটিভ ও চিয়ারোসকিউরোতে । ইন্ডিয়ান পেইন্টিং এ রোজ, গ্রে, গ্রীন, ব্ল্যাক, রেড, ব্রাউন, ইত্যাদি রং বেশী ব্যবহার হত । ওয়েস্টার্ন আর্ট এ যেখানে অনেক আবসট্রাবকশন দেখতে পাওয়া যায় । যদিও পরবর্তীতে ভারতীয় চিত্রকররাও তার দ্বারা প্রভাবিত হন ।
ছবির বা ভাস্কর্য এর ইতিহাস এতটাই বড় যে দুচার পাতায় তা নিয়ে খুব পরিষ্কার বক্তব্য রাখা সম্ভব নয় । খুব অল্প সময় হলেও শিল্প চর্চার মধ্য দিয়ে এটুকু উপলব্ধি করেছি যে চতুরঙ্গ দ্বারা ভালো কোনো শিল্পকর্ম হয় না ।
[অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]