মিনোতার

( বন্ধু তমাল রায়কে )

————————-

১.

অনেক গোলকধাঁধা পার হয়ে এলো মিনোতার

আধামানবের রূপে, অর্ধ্ব-ষণ্ড হয়ে …

হয়তো সে জানে, কিংবা, আদৌ জানে না

সে তার নিজেরই পিতা; —সন্তান নিজের !

সে একাকী বুনে চলে দুই হাতে নিজ রক্তবীজ

হয়তো-বা হয়ে নিরুপায়—কিংবা তার

নিজের ভেতরে কোনো ঘুমন্ত আহ্লাদে

তার শুধু অবিরাম রণআয়োজন

নিজের ভেতরে এক অদ্ভূত বাসনা শুধু

কামে ও হননে ঢেউ তোলে

২.

পুরাণের বাইরে এসে আপন খেয়ালে

মিনোতার একা বসে আঁকছে নিজেকে

—শিশ্ন-শিং, অণ্ড-জিভে খর খুরে, কঠিন চোয়ালে…

২.

আপাতত গন্তব্য গের্নিকা… তারপর…

তারও বহু  পর গাঢ়তর আরও কোনো

হিংসা-মেঘ  জমা হবে তার করোটিতে

মেঘে-মেঘে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড বাধাবে মিনোতার

৩.

সে চেয়েছে সবই তার হোক …

সকল আশ্চর্য দেবী

উতল-জঘন আর অনাঘ্রাত-যোনি

সুলোচনা সকল মানবী

শুধু তার, শুধু তার হোক

সে চেয়েছে তার অণ্ড

ব্রহ্মাণ্ড ভরিয়ে দিক অফুরন্ত বীজে

যাতে এর ফেনা থেকে জন্ম নিতে পারে

অর্বুদ-অর্বুদ কোটি সংহারের কীট

৪.

সদা ঘোর সদা ঘোর

স্নায়ু-মদে সদা ঘোর—- সদাই বারুদ

—-কুঁতকুঁতে চোখজোড়া অহিফেনে বুঁদ

দোজখের দু’খানি দুয়ার তাতে হা-কপাট খোলা…

৫.

ঘোঁৎ- ঘোঁৎ, ঘোঁৎ-ঘোঁৎ…

গুঁতো ও কামড় তার ভাষা

আর কোনো ভাষা তার নাই;

হননের তীব্র রতি

না-পেলে সে একদম মৃত;

৬.

সে চেয়েছে মুণ্ডমালা

সে চেয়েছে ছিঁড়ে নিতে

কিশোরীর, রমণীর লোহুভেজা স্তন

সে চেয়েছে ভয়-হ্রেষা-আর্তনাদে মৃগয়া ও মদ

৭.

দ্যাখো দ্যাখো

পুরাণের পাতা থেকে মিনোতার এসেছে বেরিয়ে

বেরিয়ে এসেছে তার কালচে-ধূসর শক্ত চোয়াল-করোটি

লিপ্সাঠাসা দু্ই চোখ যেন দুটি অতল গহ্বর

নাসারন্ধ্র জোড়া  চিমনি

যেন দুটি হাবিয়া দোজখ

৮.

হননবিকারমত্ত, ক্ষমাহীন, ক্রূর কিমাকার

আদিম পেশল এক দেহ নিয়ে এলো সে যখন

শিং দিয়ে ঘোড়াটিকে আচানক গাঁথল যখন

তীব্র হ্রেষা, আর্তনাদ চারদিকে ছড়াল যখন

মই বেয়ে একটি লোক পলায়নে উদ্যত যখন

নির্ভয় কিশোরী এসে এক হাতে তুলে ধরলো মোম

তার অন্য হাতখানি বাড়িয়ে ধরলো ফুলতোড়া…

আর নিমেষেই

থমকে গেল, টলে গেল, শিলীভূত হলো মিনোতার!

৯.

একটি জানালা থেকে এক জোড়া নওল কিশোরী

সেই দৃশ্য দেখলো কৌতুকে

সদ্য আঁকা ছবির ভেতরে—- দূরে

আবছায়া ঢেউয়ে, কুয়াশায়

ছোটো এক নৌকা ধীরে দোলে !

# #

( পাবলো পিকাসো-র  ‘মিনোতার’ ( La Minotauromachie ) ছবি  এ-কবিতার প্রেরণা)

 

Scroll to Top