শয্যা

শয্যা মানে বিশ্রাম স্নিগ্ধ পাটাতন
শয্যা মানে শরীর—বিছানো সুপ্তি চক্ষুমুদে থাকা
ঘুম কিংবা মহাঘুম পূর্ণ স্বস্তি পূর্ণ সুখ—ধ্যান।
এরকম পরিবেশে শুয়ে থেকে একবার মনে হলো
এই নশ্বর দেহ এত এত আত্মার বিলাপ
বুকে পুষে বেঁচে থাকা-মুগ্ধ বেঁচে থাকার উল্লাস!
মন ও শরীর দুই আলাদা আলাদা বিন্যাস:
শরীর অসুস্থ হলে দুচোখে ক্লান্তির ছায়া নামে
ঘুম কিংবা মহাঘুমে নিজেকেই সঁপে দিতে হয়
দূর অনন্তের কাছে।
মনও অসুস্থ হয় নাকি?
– হয়।
মন অসুস্থ হলে দীর্ঘ বিশ্রাম প্রয়োজন
প্রয়োজন স্নিগ্ধ পাটাতন।

একেক সময় ভাবি, শুয়ে শুয়ে ভাবি
এই বেঁচে থাকার ভেতর যত সুখ
ততটা অসুখ, ক্লান্তি, কান্না, দীর্ঘশ্বাস জমা;
এই বেঁচে থাকার ভেতর বারবার ধ্যান ভাঙে
চেতনার স্তর ছুঁয়ে যায়।
চেতনার বহু স্তর-সবুজ, নীলচে আভা, হলুদ হলুদ
শেষ স্তর শাদা; শাদার ভেতরে শুভবোধ।
মনও ভাবতে থাকে খুব- ব্যক্তি উহ্য,
এই মন দীঘল বিস্তৃত আকাশ অসীম অসীম!
তবে কেনো বেঁচে থাকা নশ্বর শরীর কাতরতা বুকে নিয়ে;
এই বেঁচে থাকার ভেতর যে—আনন্দ লুক্কায়িত গভীর গোপন
তার সবটুকু ধ্যান অনন্ত চিন্তার দীপ্তিরূপ
দীর্ঘ প্রতীক্ষা মানুষের।

এই মন আরেক জগৎ
বাহ্যিক যে—জগৎ দৃশ্যমান- সেই
জগতের মোহে বেঁচে থাকা আকুল আকুল;
মনের জগৎ ক্রমে সম্প্রসারণশীল বিশ্বলোক!
সৃষ্টিতত্ত্বে যে—টুকু বলেছে বিজ্ঞান- তার কণাটুকু নিয়ে
বেঁচেবর্তে থাকা স্বপ্নঘোর আবিলতা নিয়ে!

পৃথিবীর এই মহা রূপ, এই মহা মায়ার বন্ধন
এই বেঁচে থাকা মানে আনন্দ ও বিলাপ যাপন
মহা কৌতূহল নিয়ে রহস্যের দ্বার খঁুজে ফেরা।
মনের জগৎ-তার যতটা না বিজ্ঞান বলেছে
তারও অধিক তা তো বলেছে দর্শন, বলেছে প্রকৃতি;
এই চেতনার শিষে যেতে যেতে মহাবোধ লিখেছে সেকথাÑ
অসম্পূর্ণ অপরিমেয় সমাধানরহিত বর্ণন!
তবুও জীবন আছে, তবুও মৃত্যু আসে
মৃত্যুর এ—মহাশয্যা সুষুপ্তির দিকে।

Scroll to Top