সুহিতা সুলতানা’র একগুচ্ছ কবিতা
অপরাহ্ন
একদা রুশ বিপ্লবের চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতো যারা
তাদের দক্ষতা ও সমন্বিত ধারনা প্রেমের চেয়েও উৎকৃষ্ট ছিল
যা উপলদ্ধিজাত নয় তা অচিন্তার ধারক হয়ে ক্রাচে ভর করে
আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে উঠতে
আধুনিক সমাজের উপযোগী করে তুলতে চায় যারা তারাও
আজ ভয়ে থিতু হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঠোঁটে কামড় দিয়ে বসে
আছে । তাদের কাছে আস্ত ফুলের বাগানটাই কয়লার খনির
মতো। ঈর্ষামুক্ত অপরাহ্নে যখন শূন্যতা আলোকিত ভোরের
প্রত্যাশায় দুলতে থাকে তখন ডাক্তার উকিলের হিসাবও হ্রাস
পেতে থাকে। যে বালক সারা রাত জেগে জেগে ‘ অর্গানিক
ইনটেলেকচুয়াল ‘ হবার কথা ভাবে তার ভাবনার জগৎ
কতটা দৃঢ় বলে আপনি মনে করেন?হয়ত এটাই বলবেন গরম
জলে ডিম সেদ্ধ হবার মতো!চারদিকে বিস্ময়কর সভ্যতার
গড়িয়ে পড়া বায়োস্কোপ যা রূপান্তরিত আলোয় ভারতবর্ষ
দেখার মতো!
সময়কাল: ২২ শ্রাবণ ১৪২৮
সেন্ট্রাল রোড,ধানমণ্ডি
ঢাকা।
ক্ষয়
ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে রুপোর ঘুঙুর
নিরবধি জল ও জলের শরীর ছুঁয়ে দ্যাখো এ
জল সেজল নয়। তোমাকে খেয়েছে হাঙড়ের
লালা আর তুমি খেয়েছো তামাটে বোতলের ছিপি
খাওয়া তো দূরের কথা!কতদিন ভেবেছি একটু
ছুঁয়ে দেখি রঙিন জল নাগাল পাইনি।মধ্যবিত্তের
জড়তা ছন্নছাড়া হওয়ার বদলে পাণ্ডুলিপি ধরিয়ে
দিয়েছে হাতে।ধ্বংসের কিনারে বসে যারা সাপলুডু
খ্যালে চোখের মনিও বদলে নেয় নিজেদের সুবিধে
মতো তারা শ্রাবণের ধারার মতো ঝরতে থাকে
অবিরল। নিজেকে ঈশ্বরী ভেবে বিবেক উড়িয়ে
দিলে সমীকরণের ধাঁধাঁয়।চাঁদের জঙ্গল ছুঁয়ে
দ্যাখো তারাও গুণছে প্রমাদ,ক্ষয়িষ্ণু স্মারকলিপি
তোমাকে কতদূর নিয়ে যাবে কে জানে!বিষণ্ন
অপরাহ্নে শহরজুড়ে আতঙ্ক!হলো তো এবার?
যত লোভ তত ধ্বংস!ব্লাউজের বোতাম খুলতে
খুলতে খুলে দিলে মহাদিগন্ত!ডানা ভেঙে গেলে
তুমিও যে কি সেই!যদিও ক্রমশ ভিড়ের ভেতরে
তোমার ফেরারী চোখ মুক্তির নেশায় আরেকবার
উড়াল দিতে চায়!মেয়ে তুমিই আজ নিরুদ্দেশ
হতে চাও? এই যে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেল
তারপর সকালের অভিধান খুলে দ্যাখো কোথাও
তুমি নেই।মাঝপথে পড়ে আছে দু’টি থেতলে
যাওয়া ডানা,ঝরা পালক আর দূরত্ব ও ব্যবধান।
সময়কাল: ০৫\০৮\২০২১
সেন্ট্রাল রোড,ধানমণ্ডি
ঢাকা ।
মস্তিষ্ক
যারা তোমার মস্তিষ্ক বিকল করে দেয়
তোমার চিন্তা ও বিশ্বাসকে হত্যা করে
অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় অনবরত
যারা তোমার হৃৎপিণ্ড সর্বনাশের গলায়
ঝুলিয়ে হতাশার চূড়ায় উঠিয়ে দেয় তারা
কখনো রাতভর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে না
তাদের নেশার বুদ্বুদ নষ্ট জল ও বিবর্ণ
নখরের কাছে নতজানু হয়ে থাকে! শূন্য
ও শূন্যতার মধ্যে কী নিবিড় শয়তানের
অট্টহাস্য আহ্লাদ গলিয়ে উচ্ছন্নে যেতে
যেতে জীর্ণ করে তোলে চারপাশ।জন্মান্ধ
যে , সে চিরকাল না দেখার অহঙ্কারে…
স্বনামধন্য হয়ে বেঁচে থাকে তাৎপর্যপূর্ণ
হয়ে। আমি যেদিন জানতে পারলাম এই
বিস্তৃত বনভূমি এই ফসলের ক্ষেত এই
নদী আমার নয় তাহলে কিছুই আমার
ছিল না? কে আমি? অনিশ্চিতভাবে
যে যার মতো নিগূঢ় তত্ত্ব হয়ে স্তব্ধতার
আয়নায় নিরবচ্ছিন্ন শূন্যতায় বিদীর্ণ
হতে হতে নৈঃশব্দ্যের মুখোমুখি বসে।
সময়কাল: ২৭/৭/২০২১
সেন্ট্রাল রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা
অস্তিত্ব
এ এক অস্থির জীবন এই কালে মানুষ গোত্র্যচ্যূত
হতে হতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে । সব ভূখা নাঙ্গার
দল আস্ত গিলে খাচেছ গ্রাম নগর কবিতার অস্তিত্ব
দলবাজিতে র্শীষে রয়েছে রাক্ষসগ্রামের হাঘরের ভেসে
আসা লোভার্ত কুমীর।এ দুঃসময়ে যে প্ররোচনা দেয় সে
ডিজিটাল কসাই অন লাইনে ঝুলিয়ে রাখে কামুক ছিপি
সকল লোকের মাঝে একলা যে’জন হৃদয়প্রণীত শ্রাবণের
সব জল ধারণ করে বেঁচে আছে সে!কোয়ারেন্টিনের এই
দিনগুলিতে দেখেছি শকুন ও শামুকের পঞ্চমুখ!একদা
বসন্তে অরণ্যের ভেতরে ধ্রুপদীবীণা অন্তরীক্ষে উড়িয়ে
দিত হৃদয় , কৃষিমগ্ন গানের ভেতরে কোনো বিমূঢ়তা
ছিল না ! এখন লোভের আঙটায় দীর্ঘ শহরের দীর্ঘ ছায়া
সুযোগ বুঝে কেউ কেউ মেতেছে ভীষণ সস্তা অনুবাদে
অগ্নিদগ্ধ দিনে কে ডুব সাঁতার খেলে ? বাজায় বিষের
বাঁশি?আইসোলেশনের ভেতরে অর্ধস্ফুট চোখে যেটুকু
দেখা যায় ছন্দজ্ঞানহীন ষড়রিপুর অঙ্গ। পাতার ভেতরে
আরো গভীরে নেশায় মেতেছে যে,এ বঙ্গ কখনো কী
তার ছিল ? কেন অবেলায় এত রঙ্গ করিস মূর্খ বালক ?
সময়কাল : ২৫\৭\২০২০
সেন্ট্রাল রোড,ঢাকা
শ্রাবণ
কতদিন পরে পেছন ফিরে দেখি সেই ধুলোপথ
চোখের ওপর শ্রাবণ লিরিক।সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে
জোনাকির ম্লান আলো স্তব্ধ হাওয়ায় তৈলচিত্রর
মতো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ধূসর করে তোলে।
মধ্যরাত্রি যেন প্রেতপুরী হয়ে খুলে দিচ্ছে নরকের
জানালা। সেই একই রকম কীভাবে থাকে মানুষ?
আমি তো বুঝেছি,যত বোধ তত বিষাদ!স্বার্থের
কাছে মানুষ আজো পরাজিত।শোকতাপ সে
তো বাহাত্তর ঘন্টার মামুলি ব্যাপার!তারপর যে
কি সেই।
চিহ্ন
শান্ত বিকেলের গা ঘেষে যদি কোনো চিহ্ন তুমি রেখে
যাও সেটা বয়স না সময় না তৃষ্ণার্ত কোনো মুহূর্ত না
ক্ষমতাহীন কোনো মাটির চাঁই না আলোর গোলক না
কোনো জলের কল না হাওয়াকল না সংযোগহীন ঋতু
এখন কী স্তব্ধ হয়ে বসে থাকবার দিন? না ভাসমান
তরঙ্গের ওপর জগতের পাশে হাঁটু মুড়ে বসার দিন?
যতবার এসব ভাবি পাখিকাব্য হয়ে জেগে ওঠে ত্রিকাল
এ কোন ঘেরাটোপ? যদি নির্জনতার কথা ভাবো তাহলে
যতিচিহ্নের কোনো মূল্য নেই। আজকাল ঝুঁকির কোনো
অস্তিত্ব নেই কেবল মনের ভেতরে মন খেলা করে। কে
কার জন্য অপেক্ষায় থাকে?ঈর্ষার অনলে যে পোড়ে
সে পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়!তার কথা ভাবা মানেই
সমূহ পতন আর নেশায় বুদ হয়ে থাকা। নিজের মতো
করে থাকার দিন শেষ হয়ে এসেছে আজ যতসব রুগ্ন
অস্তিত্বহীন বারোয়ারি মুখোশবন্দী মুখ কুসুমিত ভোরের
হাওয়ায় নেচে বেড়ায়।এ সুন্দর পৃথিবীতে কে কতটা
সুখী হতে পারে কে পারে না তা কতটা বিবেচ্য বিষয়
বোধহীন মানুষের কাছে?এই ক্ষণজন্মা ভোরে কে
মগডালে গিয়ে বসে ? কে অন্ধত্বকে স্বাগত জানিয়ে
জাতির মেরুদণ্ড কামড়ে খায়?সারাদিন সব ষড়যন্ত্র
যে মাথায় করে ‘ দুধভাতে উৎপাত ‘ করে তারও জন্মের
উলুধ্বনি ওঠে এ জগৎ সংসারে রহস্যময়তার ভেতর
দিয়ে সেও আগুন নিয়ে খেলে!ভালো বলতে মন্দের কাল
সময়কাল: ২০\৭\২০২১
সেন্ট্রাল রোড,ধানমণ্ডি
ঢাকা
ভয়
যতবার
ফুঁ দিয়ে
উড়িয়ে দিতে চেয়েছি
ভয়
ততবার
ছড়িয়ে পড়েছে
অট্টহাস্যর
ধূসরতা
চোখের ভেতরে
ছায়া ও মায়া
খেলা করে
স্বার্থের কারণে
মানুষ
ক্রমশ পতঙ্গ হয়ে
যায়
হয়ে যায় উণ্মাদ
কীভাবে প্রেম ও সময়
বিস্ময়ে নিস্তব্ধ
হতে হতে
দুঃখের ভেতরে গড়িয়ে
গড়িয়ে যায়
হে জীবন
তুমি কী কখনো আমার
ছিলে ?
এই শ্রাবণের দিনে
বরষার সাথে
চুঁইয়ে পড়ে
অপেক্ষা
ও
আতঙ্ক
দুঃখরা মেঘ ও বৃষ্টির
সাথে গোপন
প্রণয়
খুঁজে ফেরে
সারা শহরজুড়ে যদিও
অজস্র মৃত মানুষের
ক্রন্দন
ও
ভয়
অবশেষে মানুষ জেনে গেছে
এ জগতে কেউ কারো
নয় !
১৭\ ৭\ ২০২০
সেন্ট্রাল রোড ,ঢাকা
ঘৃণা
মৃত্যুরা মরে গেলে
উড়ে আসে দলবাজ
যদি বিমূঢ়তা ভেঙে
চেয়ে দেখতে পারতেন
তাহলে ঘৃণার পাশে
আরেকটি
ঘৃণা বসিয়ে বলতেন
তুই কে হে রংবাজ?
এই দুঃসহ কালে
ঝরাপাতাদের গান
অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে
বাজায়
বাশের
বাঁশি
স্মৃতিগুলো চূর্ণ
হতে হতে
ধুলোর সাথে
মিশে যেতে থাকে
অন্তহীন সময়ের
মুখোমুখি
কতিপয় ব্যর্থ
মূর্খের দল
দেশটাকে আবার
গিলে
খেতে
চায় !
সময়কাল: ১৭/৭/২০২০
সেন্ট্রাল রোড, ঢাকা
বাঁশি
ভাবতে ভাবতে বড় একা হয়ে যাই
তাহলে এই চত্বর এই স্কয়ার এই
গৃহ এই পথ এই মদের জার কিছুই
আমার নয়? তাহলে কে আমি?
আমার এই নিখুঁত চোখের জ্যোতি
পরিপাটি আসবাব প্রিয় বিকেল যা
আমাকে আনন্দে মুড়িয়ে রাখতো
তাও আমার নয়?বাশের বাঁশি হাতে
যে প্রিয় বালক জ্ঞানতত্ব ছড়িয়ে
ত্রিমাত্রিক উৎস হয়ে হাওয়ায় ভেসে
বেড়াতো তার অন্তর্দৃষ্টি ছিল সত্য
অনুসন্ধানের মতো নিগূঢ়, সেও
আমার নয়?ক্রমশ বদলে যাচ্ছে
পৃথিবী । মখমল শয্যা ও স্বপ্নকে
যারা দ্বিখণ্ডিত করে তারা কতটা
জল ও মনের তাৎপর্য বোঝে ?
সুনির্দিষ্ট ভাবাদর্শ দ্বারা শ্রেণীগত
অবস্হান তৈরি হলেও অস্তিত্বের
ভেতরে হু হু করে ঢুকে যাচ্ছে
বিচ্ছিন্নতার কল্পিত রূপ। এক
অপছায়া নৈঃশব্দপূর্ণ মুহূর্তের
মধ্যে নিরলসভাবে জিজ্ঞাসা
চিহ্নের কাছে থিতু হয়ে আছে!
সময় কাল: ১৭\৮\২০২১
সেন্ট্রাল রোড ,ঢাকা