কবিতা

ত্রিকালদর্শী আগুন

মধ্যরাতে নিদ্রার ওপর উছলে ওঠে ত্রিকালদর্শী আগুন,নীলপাহাড়ের কার্পেটে জমে আছে স্মৃতি ও শীতের কুয়াশা।তুমিআসবে বলে সবুজ রেলগাড়ি দুরন্ত হাওয়ায় মেলে দিয়েছেডানা। মাচানের পাশে মগডালে ঝুলে আছে নৈঃশব্দ্যেরআলজিভ;এখন শীতকাল শেষে চাবুকের আড়ালে জেগে ওঠেগাছেদের শিহরণ ,সদ্যউ‌ন্থিত সবুজ পাতার মেদহীন শরীরেমুগ্ধ চাঁদের ছায়া আর আর্তুর র‌্যাবোর কাব্যকলাসহ মদেরউল্লাস বেজে ওঠে ।বৈশাখের দিনের শেষে অগ্নিপরীক্ষার নুনজললাটাইহীন নাবিকের থেমে […]

সে যেন আমার চেয়ে বেশিদিন বাঁচে

সাবানে জড়ানো দীর্ঘ কালো চুলতুমি ভুল করে রেখে গিয়েছিলে।খুলতে গিয়েও আমি তা খুলিনি।এই হোক বিহঙ্গের শেষ-আলিঙ্গন। বাথটাবে জলপদ্ম ভাসে।বুঝি ওটা জলপদ্ম নয়–,তোমার অবর্তমানেতোমার প্রণয়চিহ্ন হাসে।পুরুষের চোখে জল আসে! দেখি বেসিনে ফুলের মতোতোমার হারানো মুখফুটে আছে লাল টুথব্রাশে। কতো কী যে মনে পড়ে।কতো স্মৃতি, কতো চুম্বন,তোমার রক্তিম মাঢ়ী,বিবসনা ওষ্ঠ মনে আসে। এগুলো সামান্য বলে জানি,তবু কেন […]

তোমার অবহেলায়

দরজার ওপাশে তোমার ভাষা বুঝি আমি,স্বর শুনে উদগ্রীব হাসি —পোষাকের শ্বাস তুললে তখোনিপ্রতিমার মুখ ভাবি, তোমার অস্থির পায়ে পায়েপিঁপড়ের ধ্বণি।অনুভূতি পেলে যদি অন্ধকার নেমে এসে—আমনের ক্ষেত ভরে যায়,সমুদ্র তো, ব্যাকুল তোমাকে খুঁজে পেতে পাড়ভাঙে;লুব্রিকেন্ট তুমি নিরব পিচ্ছিলে গড়িয়েছো রেখার ওপাশেমার্বেল খেলায়… শৈশবের শত্রু ভাবা সব খেলা আমি ভুলে গেছি—তোমার অবহেলায়…।……

অপেক্ষা

  মাঝে মাঝে তােমার জন্যঅপেক্ষা করতে ইচ্ছে হয় খুব,মাঝে মাঝে তােমার জন্যঅপেক্ষা করতে ক্লান্ত লাগে অহেতুক,তােমার আসা আর না আসার মাঝাখানেচোখ বন্ধ করে জেগে থাকি আমিএকেকটা দিন আলাে পার হয়েনেমে আসি খাদের কিনারে,নামতে নামতে বার বার হেরে যাই নিজের কাছে,অথচ জিততেও তাে চাইনি কোনােদিন –তবু একেকটা শীতকাল অযথাই কেবল রঙিনমাঝে মাঝে তােমার চোখের দিকে তাকিয়েঅবশ […]

মানবিকতার মান

‘সম্মান’ জানাতে গিয়ে অপমান করে তারা কারাকে নেবে সে ‘পুরস্কার’, কে নোয়াবে ঋজু শিরদাঁড়ালজ্জা নেই শাসকের, সীমা নেই তার ধৃষ্টতারওতাদের দ্যাখানো লোভবলো কে কে ছুড়ে ফেলতে পারো বেশি কেউ পারে না তা, মাঝে মাঝে কেউ কেউ পারেবুকভরা শ্রদ্ধা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি তাঁর দ্বারেআজ এই মাতৃভূমি দস্যুর কবলে শাসিততাদের বিরুদ্ধে এই স্পর্ধা, এইই তো প্রত্যাশিত মানুষ […]

ভাষা, আমার অস্তিত্বের আধার

আমার ভাষার মধ্যে আমি পাই আমাকে।তোমাকে— আমার মা, আমার বাবাকে—পূর্বপুরুষের রক্তের প্রবাহকে। এই মাঠ-ঘাট-জলাঙ্গী নদীজলের স্পর্শ, ঘাসের স্পন্দনমেঘের কম্পন, আর আকাশ, তোমার মাধুরীসব পাই। মাটির বিচিত্র বিন্যাস, আলোছায়ার ঘ্রাণ।আমার যত সংবেদন—সুখের, দুঃখেরআশ্লেষার, আহ্লাদের, বিপন্নতার, বিপ্লবেরপ্রতিবাদের, প্রতিরোধের। মহাবিশ্বে ছড়িয়ে-থাকা আমার আদ্যন্তহীনঅস্তিত্বের।

অনুকবিতা

রাত্রি তুমি আমার মুগ্ধ প্রেমতুমি আমার ক্ষমাতুমি আমার দিনের শেষেরাত্রি তিলোত্তমা। বৃষ্টি যেদিন তোমায় প্রথম দেখিবৃষ্টি ছিল খুবতোমার চোখে আমার ছায়াকাঁপছিল নিশ্চুপ। কষ্ট আকাশ থেকে কষ্ট নেমেলেকের জলে ভাসেআমি তোমায় ধারণ করিগোপন দীর্ঘশ্বাসে। মন আকাশ জুড়ে দেখতে পেলামএক পলকের উঁকিমন বলছে, এই শ্রাবণেতোমার দিকেই ঝুঁকি।

অস্ত্র ভাঙার মুহূর্ত

প্রথম পাঠের বর্ণগুলো হানা দিচ্ছেঅ- তে অজগর কানের কাছেফোঁস-ফোঁস করেআর ঈ- এর ঈগল এসে ছোঁ মেরেনিয়ে যায়ঋ-বর্ণটি সবাইকে ঋষি বানাতে ব্যস্তকিন্তু ক-সমস্ত শক্তি দিয়েকবি হওয়ার মন্ত্র দেয় গ-বলছে সমাজে বাঁচতে হলেসব ছেড়ে ছুঁড়ে গাধা হওসর্বংসহা হও,টু -শব্দ করো নানত হতে শেখোকিন্তু ঘ-যারপরনাই ক্ষাপাটেসে ঘাড় মটকে দিতে চায়কাপুরুষ বলে দ -দেয়ালের জামা পরিয়ে দেয়বাড়ির গায়ে আরফ-সব […]

প্রব্রজ্যা ভূমি

প্রব্রজ্যা দিনের কাছে বসে থাকি; পয়মন্ত চোখেদৃশ্যান্তর ঘটে জীবন্ত ছবির, পুকুরের পাড়েপ্রয়াতদের কবর ছুঁয়ে যায় জলের কল্লোল।বেড়াঘেরা মাটির বুকের মাঝে চারার শেকড়আর নির্বাণের হাড়গোড় এক হয়ে মিশে আছে।জীবনকে ছুঁয়ে ফেলে স্বকাক্সক্ষার মার্গে আসি উঠেমায়িক শেকল ভেঙে সুউচ্চ আকাশে যাই ভেসেউর্ধ্বগামী ড্রোনে যেভাবে নকশা হয় জনপদ। পাহাড় ডিঙিয়ে অবশেষে নদীর বুকের কাছেবায়ুস্নানে শীত শীত ভাব জাগে […]

ব্যঞ্জনা

আমি শুধু ছাপার হরফে নেই-আমার অনুচ্ছেদেস্বরবর্ণ শুধুই স্বর্ণ দিয়ে মোড়ানো থাকে না,আমার ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যঞ্জনা রয়েছে! নিজের রক্ষাকবচ নিজে রচনা করে চলিযদিও অনেকবার আমাকেও পঙ্গু করেতাঁবুবাসী করতে চেয়েছিল পামরেরা,আমার বনের উঁচু গাছটা কেটে নিয়েআমাকে বিমর্ষ করেছিল! পুস্তকপ্রেমিকেরা শুধু নয়মুদ্রকরেরা শুধু নয়,সাধারণ মানুষেরা জানে-তাদের জীবনবিন্যাসে আমার অক্ষরবিন্যাসকীভাবে সিদ্ধি লাভ করেছেকীভাবে অমৃত হয়ে উঠেছে। আমাকে মৃতের সাথে আলাপ […]

Scroll to Top