সম্পাদকীয়

 

সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষের মৌলিক চিন্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংস্কৃতিক জাগরণ । শিক্ষা সংস্কৃতির সুষ্ঠু প্রয়োগ, অর্থনৈতিক মুক্তি, বাক স্বাধীনতা  মানুষের মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে । জ্ঞানিভিত্তিক সমাজ গঠন ও আলোকিত মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে সুস্হ চিন্তাবোধের বিস্তার প্রয়োজন। জ্ঞান অনুভূতি অস্তিত্ব ও বিবেক জাগ্রত করতে হলে ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। রাষ্ট্রীয়,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে যেন মানবিক মূল্যবোধ , চেতনাবোধকে সুতীক্ষ্ণ করে জীবনবোধের বিকাশ ঘটায় নিবিড় ও প্রগাঢ়ভাবে , এ প্রত্যাশা থেকেই আমাদের বর্তমান অবস্হার প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন করতে চাই। নিজেকে বিশ্লেষণ করতে হলে করণীয় বিষয়সমূহ কী?  তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে সীমাবদ্ধতাকে ভেঙে দিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডকে আধুনিক চিন্তার দ্বারা শিল্পসম্মত করা । জ্ঞানের বিভিন্ন প্রকার ও সমষ্ঠিগত রূপকে মুক্ত চিন্তার ধারক করে তুলতে সাহিত্য ও শিল্পকলার জগতকে ঋদ্ধ করা প্রয়োজন।নিজেকে উদ্ভাবন করাও কম দুঃসাধ্য নয়।নিজের অস্তিত্বকে অক্ষুন্ন রাখতে আমরা ক্রমাগত যৌক্তিক কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হতে চাই। সুতীক্ষ্মভাবে শিল্প-সাহিত্যের জগতটাকে নির্ণীতকরণ ও চিন্তার আবশ্যিকতা পরিমাপ করা।সামাজিক ক্ষমতার মধ্যে শিল্প ও জীবনবোধ ভাবাদর্শ হিসেবে কাজ করে। এবং প্রতিটি কর্মকাণ্ড একটি পদ্ধতি ও আইডিয়া তৈরী করতে সহায়ক হয়।কেউই অসীম ক্ষমতাধর নয়। অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের পরিবর্তনশীলতার আশ্রয় নিতে হয়।সাহিত্যের ব্যাপক বিস্তারসাধনে আধিপত্যকামী মানুষ থেকে দূরে থাকতে চাই।

 

চিত্র একটি পরিস্হিতিকে যৌক্তিক করে তুলতে পারে আবার নাও পারে। বিশ্ববীক্ষণ  সব সময় বর্ণিত বিষয়সমূহ যৌক্তিক করে দর্শণীয় করতে চায়।সঠিক তথ্যে সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে বিশ্বের সাথে সেতুবন্ধন করা মানে গণ্ডি থেকে বেরিয়ে পড়া। মানসিক সুস্হতার জন্য চিন্তনযোগ্য সবকিছুই গ্রহণীয় বলে আমি মনে করি। অবাস্তব ও তাৎপর্যহীন সবকিছু ভিত্তিহীন। অবক্ষয় থেকে সমাজকে রক্ষা করাও আমাদের সকল নাগরিকের দায়। উন্মত্ততা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনাও বড় দায় । এই যে সমাজে নানাবিধ উন্মাদ চিন্তাহীন অনগ্রসর  কাঠামোহীন অব্যবস্হার জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত তার জন্য কে বা কারা দায়ী তাও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এটাও অবদমনের মধ্যে পড়ে। মানসিক স্বাস্হ্যব্যবস্হার জন্য সকল দায় তো বুদ্ধিজীবীর নয়।

সুবুদ্ধি দেয়া বুদ্ধিজীবীর কাজ । কিন্তু কে শোনে কার কথা! সমাজ রক্ষার দায়িত্ব মানসিক সুস্হতা প্রদানের দায়িত্ব আসলে কার? নজরদারিত্বের মধ্যে কে থাকতে চায়? স্বাধীনতা নির্যাতন নয় আর্শীবাদ। সার কথা ডিসিপ্লিন প্রয়োজন।যা সুখপ্রদ তাই শান্তি। কী দরকার অশান্তি সাধনে? তাই বলে ভাত না খেয়ে ভরপেট মদ খেয়ে সাহিত্যসাধনায় বসলে অপ্রকৃতিস্হ সাহিত্যের জন্ম হতে পারে । শিল্পের সব শাখাসমূহে একইভাবে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সমাজ সময় ,নান্দনিক, নীতিবান ও মৌলিক গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তি। ব্যক্তির পতনের সাথে সাথে একজন লেখকের চিন্তাও বিপন্ন হতে পারে। সব অবদমনই ক্ষতিকর তা বলা যেমন আজ দুরূহ পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করলে দায় গিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের কাঁধে। মানুষ ও রাষ্ট্রকে বিপন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে আধুনিক জীবন দর্শন ,সঠিক উদ্দেশ্যে জ্ঞান চর্চা করা প্রত্যক্ষভাবে জীবনবোধকে জাগ্রত করা এবং সুষ্ঠু চিন্তার যৌক্তিক রূপকে আলোকিত করা।

 

সৌন্দর্য মানুষের মনকে আলোকিত করে এবং স্বপ্ন দেখতে সহায়তা করে।মানুষ তার মৌলিক ভাবনা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ অবস্হা চায়  সমাজ ও রাষ্ট্রের  কাছে। প্রতিটি যুক্তিই বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয় । আধুনিকমনস্ক  ও মৌলিক দর্শনচিন্তা ব্যতিক্রমী ও দূরদর্শী নবযুগের সূচনা করতে পারে এবং মানবতা,নৈতিক মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজে মহৎ কাজ করতে গেলেই যত বাধা। ঋদ্ধ ও সৌকর্যমণ্ডিত পত্রিকার বড় অভাব আজ। চিরকাল জ্ঞান ও অস্তিত্ব গবেষণার অধ্যায় হয়ে থেকেছে। গভীরভারে জ্ঞান পর্যবেক্ষণ করলে নতুন নতুন প্রক্রিয়া শক্তিশালী রূপে সমূখে এসে দাঁড়ায় । বৈচিত্র্য অবদান প্রতিটি ক্ষেত্রেই যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।এই মহামারির কালে আমাদের জীবন যেখানে বিপন্ন হতে চলেছে সেখানে সাহিত্যচর্চা করা নিতান্তই বিলাসিতার মতো মনে হতে পারে। কিন্ত জীবনবোধকে জাগ্রত করতে সৎভাবে বেঁচে থাকতে স্বাভাবিকভাবেই একজন চিন্তাশীল মানুষ মানুষের মৌলিক অধিকারকে বরাবর যুক্তিপূর্ণ করতে সচেষ্ট হয়েছে। বোধহীন মানুষ সমাজের সব জায়গায় ধূম্রজাল সৃষ্টি করে। মূর্খের আস্ফালন সবকালেই ছিল আজো আছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি সব সময় বিচ্ছিন্নতাবাদ তৈরী করে যাতে করে নৃশংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে , কোনো সৃষ্টিশীল কাজ সংগঠিত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। অযৌক্তিক বিষয়সমূহ পরিহার করে দৈনন্দিন জীবনের সাথে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যুক্ত করা । বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় হতে পারে। কতৃত্ব সব সময়ই ক্ষতিকর । নতুন নির্মাণকে আমি সব সময় স্বাগত জানাই।বর্তমান বিশ্বপরিস্হিতিতে অনলাইনের অগ্রযাত্রা সামাজিক উৎপাদনের ভিত্তি ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে আমাদের জীবনবোধের সাথে যুক্ত হয়েছে। কেন অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশের ভাবনা আমাদের মাথায় এলো সেকথা না বললেই নয়। চারদিকে ক্ষুদ্র জ্ঞানের ছড়াছড়ি। আহা কী আস্ফালন! হাঁটু সাহিত্যের কদর বাড়তে বাড়তে ব্যাঙের ছাতাও মাশরূম হয়ে গেল। এসব বৃত্তান্ত কৌতূহলোদ্দীপক ও সূত্রস্ত পত্রের মতোই বক্তব্যমুখর। অনলাইনকেন্দ্রিক  সাহিত্যপত্রিকার সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া না গেলেও ক্ষতি নেই। কোনো দলবাজি ও কূট ষড়যন্ত্র কখনোই যেন চিন্তা , সময় ও নতুনত্বকে স্পর্শ না করে। প্রিন্টিং মাধ্যমের পেট মোটা সাহিত্যের সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাই, নিরাপদে থাকতে চাই।কোনো ক্ষতিকর বিতর্কে আমরা জড়াতে চাই না। 

 

শব্দবোধ অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের প্রাক্কালে দেশের বরেণ্য তিনজন শাদামনের লেখক উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে সুপরামর্শ দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছেন এজন্য তাঁদের নিকট আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। দেশে বিদেশে অবস্হানরত অনেক গুরুপূর্ণ  কবি, কথাসাহিত্যিক , প্রবন্ধকার ,শিল্প সমালোচক তাঁদের মূল্যবান লেখা দিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। পাশাপাশি অনেক অগুরুত্বপূর্ণ লেখকও লেখা দিচ্ছি দিচ্ছি করেও আর দিয়ে সেরে উঠতে পারেননি তাঁদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ । অনুজপ্রতীম শামীম হোসেন শব্দবোধ এর নির্বাহী সম্পাদক ,তরুণ অনুবাদক। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমার পাশে থেকে সহযোগিতা করে শব্দবোধ অনলাইন সাহিত্যপত্রিকাটি  প্রকাশের সর্বাত্মক দায় মাথায় নিয়ে সুখনিদ্রা ভঙ্গ করে কাজটি যত্ন সহকারে করেছে।ওর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। আরেকজনের নাম না বললেই নয় শ্রী ব্রজনাথ সরকার নেপথ্যে থেকে ওয়েবপেজকে বিন্যাস করে শ্রীমণ্ডিত করেছে তার কাছেও আমাদের অশেষ ঋণ। দ্রুততর সময়ের মধ্যে অনলাইন সাহিত্য পত্রিকাটি প্রকাশ করতে গিয়ে ফন্টের নানা জটিলতায় লেখার ভুল থেকে যেতে পারে । এই বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি । 

আমাদের সকল আনন্দের উৎস হোক শব্দবোধ । 

 

সুহিতা সুলতানা
Scroll to Top