কৃষ্ণপক্ষের রাত
তিন কুড়ি চারের সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা সেরে
এই এসে দাঁড়িয়েছি তেমাথার মোড়ে
যে-পথে এসেছি এতকাল ধরে
আজ সেই পথ অন্তর্হিত
মহাভারতের যুদ্ধ শেষে অর্জুনের রথের মতন।
মহাপ্রস্থানের পথের মতো সামনে বিছিয়ে থাকা দুখানি রাস্তার
একটি বিপদসংকুল, শর্টকাট,
বাকিটিও খানাখন্দে ভরা তবে স্বাভাবিক,
একটু সময় বেশি লাগে।
সায়াহ্নের আবছায়ায় গুলিয়ে যায় সব
দেখি, সূর্যাস্তের আকাশে হেঁটে যায়
অলৌকিক মেঘের ড্রাগন
তার চেরা জিভে মাঝেসাঝে খেলা করে নীলাভ বিদ্যুৎ
অনেকটা জ্বলন্ত চন্দনের চিতার মতন।
আমার পা সরে না
তবু ধীরেসুস্থে হেঁটে যাই স্বাভাবিক পথে
দেখি, সন্ধ্যার আকাশ জুড়ে
পশ্চিমের পাইনের মাথায় চাপ চাপ অন্ধকার।
বুঝে যাই, কৃষ্ণপক্ষের রাত নামছে নিজস্ব মহিমায়।
লোভে পাপ
কার পাপে, বলো, আমি লুকোব আমার মুখ
মুখোশের অন্তরালে
আমি তো কোনো পাপ করিনি
অমৃতের পুত্র আমি পাপ করতে শিখিনি কখনও
পাপ কাকে বলে?
এখন যেদিকে তাকাই সেদিকেই সাধারণ ব্যাপারস্যাপার।
মানুষের অনুভূতিগুলো বড় বেশি ভোঁতা আজ
গন্ডারের চামড়া সেঁটে উটপাখি-সুখে বালিতে গুঁজেছে মুখ
এত নিস্পৃহ মানুষেরা, বলো, পাপ করতে পারে?
তবু পাপী বেছে না নিলে মানুষের চলে কী করে?
তাই কিছু মানুষের অঙ্গুলি উঠে আসে
আমার দিকে তাক করে, তুমি পাপী!
আমি তো অবাক!
পৃথিবীতে এত ভালো লোক ভালো লাগে।
চুপিচুপি ভালো হওয়ার লোভে আমি
সেই আঙুল তোলা মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি
উলটোদিকের আয়নায় আবছা আলোয় ফুটে উঠছে
ভন্ডামির মুখোশ ফুঁড়ে লোভের করাল মুখ
আর তার জলছবি সেঁটে যাচ্ছে প্রতিবিম্ব থেকে প্রতিবিম্বে।