বেচাবিক্রি

আজকাল খুব বেশি ভাবি না।
ভাবার জন্য যা দরকার, ঘিলু –
বিক্রি করে দিয়েছি। ক্রেতা?
করপোরেট। বেশ শাঁসালো মাল।

ছকবাঁধা জীবনে অভ্যস্ত হয়েছি।
স্বাধীনতার মিষ্টি কি তেতো স্বাদ
জানতে চাই না, কী দরকার?
ঘিলুহীন মাথায় এত বোঝা কুলায় না।

উঁচু-নিচুর ভেদরেখা স্পষ্ট এখন।
কথা বেচে মানুষ ঠকানো বেশ চলছে,
বাজারে বেশ কাটতি কথা-বেচা মানুষের।
আমি কথা বলি কম, কাটতিও কম তাই।

কবিতা লেখার সময় পাই না।
করপোরেট বলেছে, ‘সমর্পণ করো’।
সেই থেকে জীবন দিয়ে চলেছি;
কী পাব জানি না – চলছে তো!

সুকান্তকে বেশ মনে পড়ে, প্রায়ই।
কবিতাকে ছুটি দিয়েছিলেন ক্ষুধার পৃথিবীতে।
তাঁর মতো আমিও না-হয় ছুটি দিলাম
আমার ঘিলুহীন মাথাকে।

বেশ বেচাবিক্রি চলছে – জীবন
যৌবন সময় সংসার ভালোবাসা মেধা।
সব বিকিয়ে বেঁচে আছি,
বেঁচে থাকতে হয়, তাই।

ঠিক কেমন হতে হবে আমায়?

কালো, না নীল – ঠিক কেমন হতে হবে আমার আচ্ছাদন?
মাথার চুল থেকে পায়ের নখ – সব কি ঢাকা থাকবে?
আমার কিছুই কি উন্মুক্ত হবে না সূর্যকিরণে? শরৎ-বাতাসে?
নিরেট আঁধারে কি ঢেকে থাকবে আমার সত্তা, হৃদয়?

প্রশ্ন করছি তোমায়, উদ্যত মারণাস্ত্র-হাতে কট্টর সৈনিক।
আমাকে বলো, এসব নীতি-নিয়ম কি শুধুই আমার জন্য?
আমাকে কি গৃহপালিত পশুর মতো হয়েই থাকতে হবে
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, পরাধীনতার শেকলের টুংটাংয়ে?

চোখে চোখ রাখো আমার, দেখো আমার চোখে আগুন,
যে-আগুনে তুমি পুড়ে ছাই হচ্ছো প্রতিনিয়ত। তোমার অস্ত্র,
ধর্মের নামে আমাকে দাবিয়ে রাখার ফতোয়া – কিছুতেই আমি
ভীত নই, নই আতঙ্কিত তোমার হাতের দোর্রা দেখে।

আমার রক্তে মিশে আছে আর্য, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান।
আমার সাজপোশাকে আমু দরিয়া উছলে পড়ে, নওশাকের চূড়ায়
বরফের খাঁজে ঝলমল করে সোনালি সূর্য; আমার চোখে জ্বলে
নীলকান্তমণি, চুনি, নীলা, পান্না; পাহাড়ের ঢালে সবুজের ছায়া।

কাবুলের টিউলিপ আমি; আমাকে চাইলে তুমি ডাকতে পারো
নেশাতুর চোখে, ‘পপি’ বলে। কিন্তু চাইলেই আমাকে অবহেলা
করতে পারো না। চাইলেই পারো না আমাকে ছুড়ে দিতে
আইয়ামে জাহেলিয়াতে। তোমায় সে অধিকার আমি দেইনি।

আমি স্বাধীন। মতপ্রকাশ-শিক্ষা-কর্ম আর জীবন বেছে নেয়ার
অধিকার আমার জন্মগত। ভালো-মন্দের বিবেচনা একান্ত আমার।
সেখানে তোমার কোনো অধিকার চলবে না। ছাড়ো তুমি আমার পথ –
আমি সামনে যাবো, ভবিষ্যৎ আমায় হাতছানি দিচ্ছে।

তারপরও তুমি পথ ছাড়বে না! এ কেমন তুমি Ñ নির্বোধ, নিষ্ঠুর!
নেশা-বেচা-টাকায়, পশ্চিমের অস্ত্রে, তুমি এখন কাবুলের রাজা।
এই কি তোমার ধর্ম? এই কি তোমার নীতি? শুনি তুমি আমাকেও বেচো,
বড়লোকের হেরেমে জায়গা হয় আমার। তখন তোমার ধর্ম কী বলে?

মুক্তি যখন দেবেই না তখন বলো, কেমন হতে হবে আমায়?
আমি কি তোমার ঘরের দাসী হবো? নাকি মনোরঞ্জনকারিণী হবো
কোনো হেরেমের? যা-ই বলো আমি তা-ই হবো। তবে মনে রেখো,
সবকিছুর শেষ আছে। তুমিও একদিন শেষ হবে নিকৃষ্ট কীটের মতো।

Scroll to Top